ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাচন কাল ‘দুই নেতায় লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি’

 মোস্তাফা কামরুল:

ফটিকছড়ি অাগামী কাল (সোমবার) ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলাজুড়ে ভোটারদের মাঝে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা কাজ করলেও উদ্বেগ-উৎকন্ঠাও রয়েছে অনেক। কেমন ভোট হবে কিংবা ভোটের দিন কি ঘটছে এমন নানা উৎকন্ঠায় রয়েছেন ভোটাররা। এই উপজেলায় আওয়ামীলীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দীন মুহুরী, আনারস প্রতীক নিয়ে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ’লীগ নেতা হুসাইন মো. আবু তৈয়ব। এছাড়াও জাতীয় পার্টির মনোনয়নে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আরেক প্রার্থী আবছার আহমেদ চৌধুরী। এ নির্বাচনে মূলত নৌকা ও আনারস প্রতীকের দুই প্রার্থীর মধ্যে মূল লড়াইটা চলবে। প্রচারণার দিন থেকে শুরু করে দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর গত ক’দিন ধরে বেশ সরগরম ছিলো নির্বাচনী মাঠ। সে তুলনায় লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী কোন প্রচারণায় করেন নি। উপজেলার কয়েকটি স্পটে নামমাত্র পোষ্টার টাঙ্গানো ছাড়া কোন গণসংযোগও করেন নি তিনি। অপরদিকে, এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী ঘরনার সমর্থক, নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মাঝেও উদ্বেগের শেষ নেই। অতীতে এই দুই নেতার অন্তর্কোন্দল, গ্রুপিংসহ নানা কারণে এই নির্বাচনটা আলাদা গুরুত্ববহন করছে। দলীয় ও বিদ্রোহী দুই প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা মনে করছেন, এটা শুধু ভোটের লড়াই নয়, এ যেন অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। ভোটে হারলে রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে সরে যেতে হবে এমন শঙ্খাও আছে প্রার্থীদের। প্রসঙ্গত, ফটিকছড়ি আওয়ামীলীগে ‘ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ’ ও ‘ফটিকছড়ি আওয়ামী পরিবার’ নামে বিবাদমান দু’টি গ্রুপ রয়েছে। ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের পর থেকে মূলত ফটিকছড়ি আওয়ামীলীগ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পরে। ওই সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতদ্বন্ধিতা করেন এই দুই প্রার্থী। তখন থেকেই আওয়ামীলীগে বিভক্তি ছড়িয়ে পরে। দিন দিন এই বিভক্তি চরম আকার ধারণ করে। ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নৌকার প্রার্থী নাজিম উদ্দীন মুহুরী মূল দলের এবং বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হুসাইন মো. আবু তৈয়ব আওয়ামী পরিবার নামের অপর গ্রুপটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এই গ্রুপটিও দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় রয়েছে উপজেলাজুড়ে। ইতিপূর্বে আলাদা আলাদভাবে সাংগঠনিক কর্মসূচীও পালন করতে দেখা যায় দুই গ্রুপকে। পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। নির্বাচনকে কেন্দ্র্র করে কোন্দলের উত্তাপ আরো বেড়েছে। অতীত ঘটনা ও ভোটে জেতাকে অস্বিত্ব রক্ষার লড়াই ভেবে দুই প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকেরা শেষ সময় পর্যন্ত সমানতালে প্রচারণা চালিয়েছেন। ফটিকছড়ির উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ১৮ টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভাকে ভোট ব্যাংকের দিক থেকে দু’ভাগে বিভক্ত করলে উত্তরাঞ্চলের ভোটে নৌকার প্রার্থী ও দক্ষিণাঞ্চলের ভোটে বিদ্রোহী প্রার্থী এগিয়ে থাকবেন। জানা গেছে, নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে উত্তরজেলা আ’লীগ নেতৃবৃন্দ নানা মেকানিজম করছেন। আবার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থীকে জেতাতে খোদ উপজেলা আ’লীগের সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অনেকেই এক হয়েছেন। তাই এই দুই প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে ধারণা করা হচ্ছে, পরাজিত প্রার্থী তীরে এসে তরি ডুবাতে পারেন। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যাক্ত করে নৌকার প্রার্থী নাজিম উদ্দিন মুহুরী বলেন, ‘অনেকের সাথে তালিকা করে কেন্দ্রে আমার নামও পাঠানো হয়েছিল। সেখানে নানা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে আমাকে দলের সভানেত্রি মনোনয়ন দিয়েছেন। মনোনয়ন না পেয়ে একটি পক্ষ বিরুদ্ধাচরণ করছেন। কোন অপশক্তিই নৌকার বিজয় ঠেকাতে পারবেনা।’ আনারস প্রতীকের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হুসাইন মো. আবু তৈয়ব বলেন, রাজনীতির কারণে আমাকে অনেক কিছু হারাতে হয়েছে। আমার একটা ভাইকে জামায়াত-শিবির গুলি করে হত্যা করেছে। তবুও আমি পিছপা হইনি।কর্মী-সমর্থকদের অনুরোধে প্রার্থী হয়েছি। তাদের আবেগ, ভালোবাসা ওগণমানুষের অকুন্ঠ সমর্থনই আনারসের বিজয় নিশ্চিত করবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment